ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪

এনাল ফিসার বা মলদ্বারের সমস্যা অবহেলা করা উচিত নয়

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৪৬, ১০ মার্চ ২০২০

ল্যাপারোস্কপিক পায়ুপথ ও জেনারেল সার্জারী বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ আবু খায়ের। ছবি: একুশে টেলিভিশন

ল্যাপারোস্কপিক পায়ুপথ ও জেনারেল সার্জারী বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ আবু খায়ের। ছবি: একুশে টেলিভিশন

তীব্র বেদনাদায়ক রোগগুলোর মধ্যে এনাল ফিসার অন্যতম। শক্ত পায়খানা বা কোষ্ঠকাঠিন্য এ রোগের নৈপথ্য কারিগর। পায়খানা এমন শক্ত হয়ে যায় যে ত্যাগ করার কালে মলদ্বারে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এই সমস্যাটিকে বলা হয় এনাল ফিসার। এ রোগ ও মলদ্বার ক্যান্সার অনেক ক্ষেত্রে সমান ধরনের লক্ষণ নিয়ে আসে বিধায় কখনো অবহেলা  করা উচিত নয়।

এনাল ফিসার প্রসঙ্গে নানা প্রশ্নের জবাবে একুশে টেলিভিশনে পরামর্শ দিয়েছেন ইবনে সিনা হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনোস্টিক লিমিটেডের সার্জারী কনসালটেন্ট এবং ল্যাপারোস্কপিক পায়ুপথ ও জেনারেল সার্জারী বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ আবু খায়ের। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মুছা মল্লিক। 

ডা. মোহাম্মদ আবু খায়ের বলেন, মলদ্বারের অতীব সূক্ষ্ণ ক্ষতকে আমরা এনাল ফিসার বলি। একটি মলদ্বারের অংশকে আমরা দু'ভাগে ভাগ করি। সামনের অংশ ও পেছনের অংশ। এনাল ফিসার জনিত সমস্যায় এই ক্ষতটি পেছনের অংশে হয়ে থাকে শতকরা ৯০ ভাগ, আর সামনের অংশে মাত্র ১০ ভাগ।

একুশে টেলিভিশন: মলদ্বারের তীব্র যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা এনাল ফিসারের কারণ সম্পর্কে জানাবেন?
ডা. মোহাম্মদ আবু খায়ের: শক্ত পায়খানাই এ রোগের একমাত্র এবং প্রধান কারণ। যদি কোনো কারণে পায়খানা শক্ত হয়ে যায় এবং এই অবস্থা চলতে থাকে তাহলেই এ রোগ দেখা দিতে পারে। যান্ত্রিক যুগ, খাবার তালিকার পরিবর্তন হয়েছে। কাজের পরিধি বাড়ায় অনেককেই অফিসে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটাতে হয়। সেক্ষেত্রে অধিকাংশকেই নির্ভর করতে হয় হোটেলের খাবারের উপর। যেখানে সবজি জাতীয় খাবারের সংখ্যা বিরল। ফলে খেতে হয় অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার। এছাড়া কাজের চাপ বাড়ার কারণে পায়খানা চেপে রাখার প্রবণতা থাকে কারো কারোর। এর ফলে পায়খানা শক্ত হয়ে যায়। আর শক্ত পায়খানা এমন শক্ত হয়ে যায় যে, ত্যাগ করার কালে মলদ্বারে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। যাকে আমরা বলি এনাল ফিসার বা মলদ্বার ফেটে যাওয়া।

একুশে টেলিভিশন: এছাড়া এনাল ফিসারের অন্য কোনো কারণ রয়েছে কি?
ডা. মোহাম্মদ আবু খায়ের: অনেকের পাইলসের সার্জারি রয়েছে, অতিরিক্ত কাটাকাটি করা হয়েছে। ফলে ঘা শুকাতে সময় লাগছে এবং মলদ্বার সংকোচিত হয়ে পড়ছে। এক্ষেত্রেও স্বাভাবিক মলত্যাগের সময় এনাল ফিসার হয়ে থাকে। এছাড়া ক্রনিক ডিজিজ, এইডস এবং সিফিলিসের জন্য এই রোগের ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে। 

একুশে টেলিভিশন: এনাল ফিসার (মলদ্বার ফেটে যাওয়া) কাদের বেশি হয়? 
ডা. মোহাম্মদ আবু খায়ের: মহিলাদের এ রোগ বেশি হয়। বৃদ্ধদের এ রোগ হয় না বললেই চলে। তবে শিশু ও নবজাতকদের এ রোগ হতে পারে। যার ফলে কোলন ফুলে ওঠে। যাকে মেগাকোলন বলে।

একুশে টেলিভিশন: এনাল ফিসারের লক্ষণ সম্পর্কে কিছু বলুন। 
ডা. মোহাম্মদ আবু খায়ের: কয়েকটি লক্ষণের মধ্যে অন্যতম হলো ব্যথা এবং রক্তপাত। 
• ব্যথা- প্রচণ্ড ব্যথা হয় মলত্যাগের সময়, যা অনেক সময় পর্যন্ত স্থায়ী হয়। আবার পরবর্তী মলত্যাগের সময় এ ধরনের ব্যথা অনুভূত হয়। এ অবস্থা চলতে থাকায় অনেকে ভয়ে পায়খানা করা বন্ধ রাখে। যার ফলে এ রোগের ভয়াবহতা আরও বৃদ্ধি পায়। মল আরও শক্ত হতে থাকে, আর এই শক্ত মল প্রচণ্ড ব্যথার সৃষ্টি করে মলত্যাগের সময়। 
• রক্তপাত- মলের গায়ে হালকা রক্তের দাগ লেগে থাকে। কখনো অতিরিক্ত ঝরে পড়ে না। রক্ত রসের দ্বারা মলদ্বার সবসময় ভেজা থাকে। এতে চুলকানির সৃষ্টি হয়। 

একুশে টেলিভিশন: এনাল ফিসার জনিত সমস্যায় প্রাথমিক অবস্থায় কি ধরনের পরীক্ষা করা হয়?
ডা. মোহাম্মদ আবু খায়ের: খালি চোখে বাইরে থেকে মলদ্বার পরীক্ষা করার সময় তেমন কিছু চোখে পড়ে না। অনেক ক্ষেত্রে চামড়ার একটি বর্ধিত অংশ নজরে পড়ে যাকে বলা হয় সেনটিনেল পাইলস। অনেক সময় দেখা যায়, মলদ্বারটি শক্ত টাইট হয়ে আছে। আঙ্গুল দিয়ে পরীক্ষার সময়ে সমস্যা তীব্র হলে রোগী লাফিয়ে ওঠে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লোকাল এনেসথেসিয়া দিয়ে এ রোগ পরীক্ষা করতে হয়। এ রোগ ও মলদ্বার ক্যান্সার অনেক ক্ষেত্রে সমান ধরনের লক্ষণ নিয়ে আসে বিধায় কখনো অবহেলা বা কালক্ষেপণ করা উচিত নয়। যদি এনাল ক্যান্সার হয়ে যায় এবং তা প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়ে তাহলে চিকিৎসার মাধ্যমে দ্রুত ভালো হওয়া যায়।

একুশে টেলিভিশন: এ রোগের একজন রোগী কি ধরনের চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারেন? 
ডা. মোহাম্মদ আবু খায়ের: এনাল ফিসার অতি সংবেদনশীল অসুখ, মলদ্বারে এর স্থান। যেহেতু শক্ত পায়খানা বা কোষ্ঠকাঠিন্য এ রোগের নৈপথ্য কারিগর। সুতরাং বলা যায়, নিয়মিত পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং উচ্চ আশঁযুক্ত খাবার গ্রহণে প্রাথমিক অবস্থায় এ রোগ নিরাময় সম্ভব। ব্যথা এ রোগের একমাত্র লক্ষণ হওয়ায় এ থেকে পরিত্রাণ পেতে চায় রোগীরা। শতকরা ৭৫ ভাগ রোগী শুধুমাত্র ওষুধের দ্বারা ভালো হয়। পঁচিশ ভাগ রোগীর প্রয়োজন হয় সার্জারীর। অভিজ্ঞ সার্জন দ্বারা এই চিকিৎসা করাতে হবে, নইলে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রাথমিক অবস্থায় একজন রোগীর উপসর্গের উপর ভিত্তি করে সাধারণত মল নরম করার ওষুধ ল্যাক্সেটিভ জাতীয় (সিনালাক, এভোলাক, টুলোজ) দেওয়া হয়। এর সঙ্গে এনাল ফিসারের ব্যথা কমানো এবং ক্ষত নিরাময়ের জন্য (এনাকেইন, রেকটোকেয়ার, নাইট্রোভাস) অয়েন্টমেন্ট দেওয়া হয়। তবে এগুলো ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। 

একুশে টেলিভিশন: আপনাকে ধন্যবাদ একুশে টেলিভিশনের সঙ্গে থাকার জন্য। 
ডা. মোহাম্মদ আবু খায়ের: আপনাকেও ধন্যবাদ।

এএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি